
বি.এম. সাদ্দাম হোসেন ; স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাস্তায় মাঝে মাঝে এমন দৃশ্য দেখা যায়—দুটি কুকুর একে অপরকে আঁকড়ে ধরে আছে, অথচ নড়ছে না, মুখ দুটি আবার বিপরীত দিকে! অনেকেই অবাক হন, কেউ বিরক্ত হন, কেউ হাসি-ঠাট্টা করেন, আর কিছু মানুষ এতটাই নির্দয় যে গরম/ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে কুকুরগুলোকে আলাদা করার চেষ্টা করেন। অথচ এটি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রজনন প্রক্রিয়ার অংশ, যার নাম Copulatory Tie। এ সময় পুরুষ কুকুরের যৌনাঙ্গের একটি অংশ (Bulbus Glandis) ফুলে গিয়ে স্ত্রী কুকুরের যোনিতে আটকে যায়, ফলে তারা কিছু সময় (৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত) সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। এই বন্ধনটি প্রকৃতির বানানো এক ধরনের জৈবিক লক, যা সফল প্রজননের জন্য দরকারি। এটি মোটেও বেদনাদায়ক নয়, বরং প্রজননের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে মানুষের অজ্ঞতা ও অমানবিক আচরণ এই প্রক্রিয়াকে ভয়ানক করে তোলে। জোর করে আলাদা করতে গেলে দু’জনেরই অঙ্গ ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, রক্তপাত হতে পারে, এমনকি ভবিষ্যতে কুকুরটি প্রজননে অক্ষম বা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করতে পারে। রাস্তায় দেখা অনেক অসুস্থ কুকুরের এই পরিণতির পেছনে মানুষের অশিক্ষা ও নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপই দায়ী।
আমরা যদি সত্যিই শিক্ষিত ও সভ্য হতে চাই, তাহলে কুকুরদের এই প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা, বোঝা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াটা জরুরি। ইসলামসহ পৃথিবীর সব মানবিক ধর্ম প্রাণীদের প্রতি সদয় হতে শিক্ষা দেয়। রাসুল (সা.) প্রাণীকে পানি খাওয়ানোর জন্য একজন মানুষকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন—এটা কি আমাদের জন্য চোখে আঙুল দিয়ে শিক্ষা নয়? তাই এমন দৃশ্য দেখলে একটুও বিরক্ত না হয়ে বরং অন্যদের বোঝান—এটা প্রাকৃতিক, এতে হস্তক্ষেপ করবেন না। কুকুরগুলো একসময় নিজে থেকেই আলাদা হয়ে যাবে। আপনার এই ছোট্ট সচেতনতা একটি কুকুরের জীবন বাঁচাতে পারে। আজ আপনি যদি একটিবার দয়া দেখান, কাল কেউ আপনার জন্য দয়া দেখাবে। মনে রাখবেন—পৃথিবীটা শুধু আমাদের না, প্রাণীদেরও।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইয়াসির আরাফাত মিলন
স্বরস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ - প্রতিদিনের আলোচিত ক্ন্ঠ