নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত করা জুলাই সনদের ভাষ্যে সংযোজন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার বিপরীতে জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০০৯ সালের পরবর্তী সময়ে পরিচালিত আন্দোলনকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’ হিসেবে সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের পর সনদের সর্বশেষ ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে। পূর্বের খসড়ায় থাকা কিছু শব্দ ও সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা ‘প্রায় এক হাজার’ থেকে সংশোধন করে ‘সহস্রাধিক’ করা হয়েছে। আবার ‘স্বৈরাচারী শাসক’ শব্দের পরিবর্তে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ শব্দবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে।
সংশোধিত ভাষ্যের প্রধান দিকগুলো
১৯৭৫–১৯৭৯ প্রসঙ্গ: পূর্বে ১৯৭৬ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও নতুন ভাষ্যে বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
১/১১ প্রসঙ্গ: সনদে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠার ঘটনায় নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যা ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নিহতের সংখ্যা বর্ণনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং ভাষ্য আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন: ২০০৯ সালের পরবর্তী ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিষয়টি সনদে যুক্ত হয়েছে।
প্রস্তাব সংখ্যা হ্রাস
সনদের আগের খসড়ায় ৮৪টি প্রস্তাব থাকলেও সংশোধিত ভাষ্যে তা কমিয়ে ৮০টি করা হয়েছে। কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কিছু প্রস্তাব সনদের অন্যান্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আলাদা করে উল্লেখের প্রয়োজন হয়নি।
স্বাধীন পুলিশ কমিশন
সংশোধিত সনদে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনটি হবে ৯ সদস্যের, যার চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা। এছাড়া সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী বা বিচারক এবং একজন মানবাধিকারকর্মী এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিশনে অন্তত দুজন নারী সদস্য রাখার প্রস্তাবও রয়েছে।
নোট অব ডিসেন্ট
সনদের অঙ্গীকারনামায় নতুন একটি ধারা যোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, তারা জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইয়াসির আরাফাত মিলন
স্বরস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ - প্রতিদিনের আলোচিত ক্ন্ঠ