নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন গ্রাহক কত টাকা ঋণ নিতে পারবেন, তা নিয়ে নতুন নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কত ঋণ নেওয়া যাবে, তার নিয়ম থাকলেও একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সীমা ছিল না। ফলে বড় গ্রাহক বা গ্রুপগুলো বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে—সব ব্যাংক মিলে একজন গ্রাহকের মোট ঋণ সীমা নির্ধারণ করা হবে। গ্রাহকের নিট সম্পদ, লিভারেজ রেশিও ও আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতেই এ সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এর ফলে তথ্য গোপন করে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান জানান, বিষয়টি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার আলোকে একটি গবেষণা চালানো হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ সীমা নির্ধারণ মানসম্মত ও সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে, যাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয় এবং ঝুঁকিও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, সীমা না থাকায় করপোরেট গ্রুপগুলো নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। সীমা নির্ধারণ করলে ঋণ বিকেন্দ্রীকরণ বাড়বে এবং ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে একই প্রকল্প দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার বা অর্থপাচারের ঘটনাও কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে একক গ্রাহককে একাধিক ব্যাংক ঋণ দেওয়ার প্রবণতা দাঁড়ায় প্রায় ৯১ শতাংশে। আর চলতি বছরের ফিন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাত্র দুই গ্রাহকের হাতে আছে ১৪টি ব্যাংকের মূলধনের সমপরিমাণ ঋণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সরকারের সময় বড় গ্রাহকদের জন্য ব্যাংক ঋণই ছিল লুটপাটের অন্যতম কেন্দ্র। সরকার পরিবর্তনের পর নীতিমালায় পরিবর্তন আসায় খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। এ বছরের মার্চ শেষে দেশের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইয়াসির আরাফাত মিলন
স্বরস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ - প্রতিদিনের আলোচিত ক্ন্ঠ