সাইফুল ইসলাম ঝন্টু, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (মুম্বাই -ভারত):
গতকার ১২ই জুন রোজ বৃহস্পতিবার বেলা ১.৩০ মিনিটে ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট এ১৭১, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে উক্ত বিমানের ২৪১জন যাত্রী নিহত ও একজন জীবিত বেঁচে ফিরেছে। নিহতদের তালিকায় বিজেপি নেতা ও গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানির নাম দেখে আমার ২০০২ সালের কথা মনে পড়ে গেলো। আরও মনে পড়ে গেল গুজরাটে মুসলিম নিধনের সেই নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞের বিভৎস কাহিনী।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘গোধরা রেলস্টেশনের’ নিকটে ‘সাবারমাতি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন লাগে। এই আগুন লাগার ঘটনার পরে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চা-ওয়ালা নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর নির্দেশে ‘সাবারমাতি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় স্থানীয় মুসলিমরা জড়িত বলে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার অন্যতম কারিগর ও কুশীলব গুজরাটের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি।
সেই গুজব সৃষ্টির পরে শত সহস্র হিন্দুরা মুসলিমদের ঘরে ঘরে আক্রমণ চালায়, মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে মারতে শুরু করে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হয় এই রক্তপাত। মাত্র কয়েকদিনে প্রায় ২০০০ এর মতো মুসলিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, আহত হয় আরও অনেক। দেড় লক্ষেরও অধিক মুসলিম গুজরাট থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়। রাতের ব্যবধানেই এতো গুলো মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে।।
গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চা-ওয়ালা নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী স্থানীয় হিন্দুদেরকে সরকারী পুলিশ বাহিনী দিয়ে সাহায্য করেছিলো। কিছু মুসলিম নির্বাচনে মোদীর অন্যতম প্রতিপক্ষ এহসান জাফরির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো। কিন্তু প্রায় বিশ হাজার উন্মত্ত হিন্দু তার বাড়ি ঘেরাও করে। আর শেষমেশ এহসান জাফরি নেমে এলে তার হাত ও পা দু’টো কেটে মৃতদেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করা শেষে মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বলাই বাহুল্য, তার ঘরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় মুসলিম পুরুষদের নির্মম ভাবে কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় এবং নারীদের ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। ঐ সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে এসেছিলো আরও বেশ কয়েকটি গণহত্যার কথা। এদের মধ্যে অন্যতম ‘গুলবার্গ ম্যাসাকার’ যেখানে একসাথে ৯০ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিলো।
গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আড়ালে দুই হাজারের অধিক সংখ্যালঘু নিধনের অন্যতম কুশীলব গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। এমন একজন খুনির মৃত্যুতে আমি সহমর্মিতা জানাতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
তবে এই প্লেন দুর্ঘটনায় অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের মর্মান্তিক মৃত্যুবরণের জন্য গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।
সুত্রঃ জাতীয় প্রতিদিনের আলোচিত কণ্ঠ ।।