বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিন দিন বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে, তেমনি সেখানে প্রভাব বিস্তার করার জন্য নানা প্রযুক্তিগত কৌশলও ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বট বাহিনী।
বট কী?
‘বট’ শব্দটি এসেছে ‘রোবট’ থেকে। মূলত এটি একটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, যা নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের মতো কাজ করতে পারে। যেমন—একটি বটকে প্রোগ্রাম করে দিলে সেটি নির্দিষ্ট সময় পর পর কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করবে, পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করবে, কিংবা নির্দিষ্ট ধরনের বার্তা শেয়ার করবে। অর্থাৎ, বাস্তব মানুষ না থাকলেও বটকে ব্যবহার করে অনেক মানুষের সক্রিয়তা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়।
বট বাহিনী
যখন শত শত কিংবা হাজার হাজার বটকে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে বলা হয় বট বাহিনী। এ বাহিনী সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একসাথে সক্রিয় হয়ে কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা রাষ্ট্রের পক্ষে জনমত গঠন করার চেষ্টা করে। ফলে একটি বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মনে হয়, অনেক মানুষ একই মতামত দিচ্ছে।
প্রোপাগাণ্ডায় বটের ভূমিকা
বট বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় প্রোপাগাণ্ডা চালানোর জন্য। যেমন—
রাজনীতি: নির্বাচনকালীন সময়ে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বাড়াতে কিংবা প্রতিপক্ষকে ছোট করতে বট বাহিনী গুজব ছড়ায়, ভুয়া সমর্থন দেখায়।
বাণিজ্য: কোনো পণ্যের রিভিউতে কৃত্রিমভাবে লাইক-কমেন্ট বাড়িয়ে ক্রেতাকে প্রভাবিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি: বিভিন্ন রাষ্ট্রও তাদের নীতিকে জনপ্রিয় করে তুলতে বা প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রকে দুর্বল দেখাতে বট বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
সমস্যা ও ঝুঁকি
১. ভুয়া তথ্যের বিস্তার: মানুষ বুঝতেই পারে না কোনটি আসল আর কোনটি বটের তৈরি প্রচারণা।
২. জনমত প্রভাবিত: গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকৃত হয়, কারণ জনগণ কৃত্রিম তথ্যের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়।
৩. বিশ্বাসহানি: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের আস্থা কমে যায়।উপসংহার
বট বাহিনী আধুনিক প্রযুক্তির এক বড় চ্যালেঞ্জ। এটি যেমন তথ্যপ্রযুক্তির এক অভিনব দিক, তেমনি সমাজে ভ্রান্ত ধারণা ও ভুয়া প্রচারণার বড় উৎস। তাই ডিজিটাল যুগে সচেতনতা বাড়ানো, আইন প্রয়োগ জোরদার করা এবং স্বচ্ছ তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। না হলে বট বাহিনী মানুষের চিন্তা ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
…