সোমা রানী কর্মকার,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রাপ্তির ধরণ ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। এক সময়ে তথ্য খোঁজার জন্য ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতেন। তবে আজকের সময়ে চ্যাটজিপিটি, গুগলের এআই ওভারভিউসসহ বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (AI) টুল একসাথে বহু তথ্য সরবরাহ করায় ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ট্রাফিকের হ্রাস স্পষ্ট দেখা দিয়েছে।
উইকিপিডিয়ায় ট্রাফিক হ্রাসের কারণ ও প্রভাব
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তুলনায় তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর সংখ্যা প্রায় ৮ শতাংশ কমে গেছে। এই হ্রাসের পেছনে মূল কারণ হিসেবে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এখন সরাসরি উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওয়েবসাইট লিঙ্কে যাওয়ার প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে উইকিপিডিয়ার মত তথ্যভাণ্ডার সাইটের ভিজিট কমে যাচ্ছে।
উইকিমিডিয়ার বট শনাক্তকরণ ব্যবস্থার নতুন আপডেটের পর থেকে এই পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মার্শাল মিলার, উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করেছেন, এই হ্রাসের পেছনে সামাজিক মিডিয়া এবং এআই প্রযুক্তির আধিপত্য রয়েছে, যা মানুষের তথ্য অনুসন্ধানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের তথ্যের উৎস মূলত উইকিপিডিয়া হলেও ব্যবহারকারীরা সরাসরি আমাদের সাইটে আসছেন না, বরং এআই টুল থেকে তথ্য গ্রহণ করছেন।”
অন্যান্য প্রকাশক সংস্থার অভিজ্ঞতা
শুধু উইকিপিডিয়া নয়, বহু সংবাদ ও প্রকাশনা সংস্থাও একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ‘মেইলঅনলাইন’ ও ‘মেট্রো’র মালিক ডিএমজি মিডিয়া জানায়, গুগলের এআই ওভারভিউস ফিচারের কারণে তাদের ওয়েবসাইটের ক্লিক-থ্রু রেট ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এটি প্রকাশ করে যে, প্রযুক্তির এই পরিবর্তন কেবল তথ্য উপস্থাপনের ধরনেই নয়, ব্যবসায়িক দিক থেকেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
গুগলের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ
গত মাসে ‘রোলিং স্টোন’ ম্যাগাজিনের মূল প্রতিষ্ঠান ‘পেন্সকে মিডিয়া কর্পোরেশন’ গুগলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অভিযোগ রয়েছে যে, গুগল তাদের প্রবন্ধের সংক্ষিপ্তসার এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করছে, যা কপিরাইট ও তথ্যের স্বতন্ত্রতা লঙ্ঘন করছে।
তথ্য খোঁজার নতুন যুগ: সুবিধা ও উদ্বেগ
এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারকারীদের জন্য সময় বাঁচছে এবং তথ্যের বহুমাত্রিক সমাহার পাওয়া যাচ্ছে এক জায়গায়। তবে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমে যাওয়া প্রকাশক ও তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে তাদের রাজস্ব ও সৃষ্টিকর্তাদের স্বীকৃতি প্রভাবিত হতে পারে।
পাঠকের জন্য গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বর্তমান সময়ে তথ্য অনুসন্ধানে এআইয়ের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। তবে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও উত্স যাচাইয়ের দায়িত্ব এখনো মানুষের ওপরই রয়েছে। পাঠকদের উচিত তথ্যের উৎস খতিয়ে দেখা এবং গুণগত মান বজায় রাখা। পাশাপাশি, প্রকাশক সংস্থাগুলোর নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিজস্ব কনটেন্ট উন্নয়নের মাধ্যমে টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
এআই প্রযুক্তি তথ্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক হলেও ওয়েবসাইটের ভিজিটর হ্রাসের মাধ্যমে প্রকাশকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে হলে তথ্য সৃষ্টিকারী ও প্রকাশকদের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।