মোঃ নাঈম উদ্দীন স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা। যাত্রী বেশে আসা দুর্বৃত্তদের পাতা ফাঁদে পড়ে জীবনের একমাত্র সম্বল হারালেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার এক দরিদ্র ইজিবাইক চালক বশির উদ্দিন (৫০)।
চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করার পর ছিনতাইকারীরা তার নতুন ইজিবাইকটি নিয়ে চম্পট দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
এই ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনো ইজিবাইকটি উদ্ধার না হওয়ায় পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বশির উদ্দিন দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত মো. পাঞ্জাব আলীর ছেলে। দিন আনে দিন খাওয়া এই পরিবারটি ইজিবাইকের আয়েই কোনোমতে চলত।
গাড়িটি ছিনতাই হওয়ার পর থেকে তাদের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
অচেতন অবস্থা থেকে সুস্থ হওয়ার পর বশির উদ্দিন (৫০) ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, “চন্দ্রবাস বাজার থেকে দুইজন অপরিচিত লোক চারশত টাকায় মুজিবনগর কেদারগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নেয়।
পথে তারা দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আমাকে খেতে দেয়। আমি অর্ধেক বিস্কুট খাওয়ার পর থেকেই মাথা ঘুরে আসে, এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে শুনেছি, তারা আমার নতুন ইজিবাইক নিয়ে পালিয়েছে।”
বিকেলের দিকে এক আত্মীয় তাকে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারকে খবর দেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
বশির উদ্দিনের ছেলে সজল আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, মাত্র তিন মাস আগে তিনটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তারা নতুন ইজিবাইকটি কিনেছিলেন।
মাসে বিশ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
সজল বলেন, “তিন কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে, এখনো নয়টি বাকি। বাবার সেই ইজিবাইকটাই আমাদের একমাত্র জীবিকা ছিল।
সেটি হারিয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের অনেক বেলা না খেয়ে কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ইজিবাইকটি উদ্ধার হয়নি। উপার্জনের কোনো রাস্তাও নেই, এখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।”
স্থানীয় সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যাত্রী বেশে এসে চালকদের অজ্ঞান করে তাদের গাড়ি ছিনতাই করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
বশির উদ্দিনের মতো গরীব মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে তার ইজিবাইক উদ্ধারের জোর দাবি জানাই।”
এদিকে, এই ঘটনায় মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, “এমন একটি ঘটনার খবর শুনেছি, তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওসি’র এমন বক্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, কেননা একটি গরিব পরিবারের সব হারানোর খবর পাওয়ার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অসহায় ইজিবাইক চালক বশির উদ্দিনের পরিবারকে মানবিক সহায়তা প্রদান করতে এবং তার হারানো জীবিকার উপায় ফিরিয়ে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
দারিদ্র্যপীড়িত এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবান ও সেবাপ্রবণ মানুষদের প্রতি জরুরি সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বশির উদ্দিনের পরিবার চরম বিপদের মুখে, তাদের সহায়তার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসা প্রয়োজন।