শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

বোয়ালমারীতে মহিলা মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ চলছে গোপনে ‘মীমাংসার দরবার’, এলাকায় তোলপাড়

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের লংকারচর এলাকায় এক মহিলা মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লংকারচর চরছাতিয়ানী দারুস সুন্নাহ মহিলা মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় ওসমান মোল্যা। প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ওসমান মোল্যা এবং তার ছেলে আব্দুর রহমান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় প্রায় ৫০ জন ছাত্রী ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করত।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক আব্দুর রহমান একই ইউনিয়নের এক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ডেকে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। গত রবিবার রাতে ওই শিক্ষক পুনরায় ঘটনাটি ঘটাতে গেলে প্রতিবেশীদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন সোমবার রাতে কিছু স্থানীয় মাতুব্বর সালিশ বসিয়ে বিষয়টি ‘সমঝোতা’ করার চেষ্টা করেন। একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে গোপনে মীমাংসার আলোচনা চলছে। তবে সালিশটি স্থগিত হয়ে যায়, কারণ ভুক্তভোগী ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মাদ্রাসায় গেলে দেখা যায়

বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার মূল ফটকে তালা ঝুলছে, সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল কেউই সেখানে উপস্থিত নেই। এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার পর থেকে আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ।

প্রিন্সিপালের বক্তব্য

মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ওসমান মোল্যা সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটা আমি জানি না, আমি ওই সময় এখানে ছিলাম না। আপনারা আমার জামাই সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন।”

জামাই সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য

তিনি বলেন, “বিষয়টি এখন মীমাংসার মধ্যে আছে। সংবাদ করবেন না, শান্তভাবে সমাধান হয়ে যাবে।”

স্থানীয় শিক্ষাবিদ শাহিন প্রফেসরের প্রতিক্রিয়া

শাহিন প্রফেসর বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমি চাই না এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হোক।” পরে সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ভুক্তভোগীর পরিবারের বক্তব্য

মেয়েটির দাদা, মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমার নাতনী এখনো অসুস্থ। প্রথমে তাকে মাগুরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে বোয়ালমারীতে আনা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কোথায় রাখা হয়েছে আমি জানি না, আমার ছেলেরা দেখছে।”

মেয়েটির চাচা জাহিদ বলেন, “এখন কিছু বলা যাবে না। সাতৈর বাজারে এসে কথা বলেন।” পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

লংকারচর গ্রামের কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা বলেন, “ওই মাদ্রাসার ভেতরে বহুদিন ধরেই সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড চলছিল। বাড়ির ওপর মাদ্রাসা করে চারপাশে উঁচু দেয়াল তোলা হয়েছে। আমরা ভাবতাম ধর্মীয় শিক্ষা হয়, এখন দেখি ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে।”

আরেকজন বলেন, “ওই শিক্ষকের স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও সে যে কাজ করেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি

ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নবাবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বোয়ালমারী থানার ওসি’র সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।



লাইক করুন