শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন: ইসি আনোয়ারুল পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মাদক, বাড়ছে অপরাধ ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ বীরগঞ্জে উৎসাহ উদ্দীপনায় ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত পিরোজপুরে নারী হত্যার ছয় মাসেও হয়নি চার্জশিট, বিচার ও জমি ফেরতের দাবি জয়পুরহাট-২ আসনে আলোচনায় বিএনপির ত্যাগী নেতা লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ পেটের ভুরি বের করে পানিতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হত্যা মামলার দুইজন কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার .. কিপটে মামা – লাবলু হোসেন জমির মালিক ভারতে থাকলেও বাংলাদেশে তার জমি দলিল করে নেওয়া হলো প্রভু তুমি আলোর উৎস ~ মীরঃ নাজমুল ~ ১১৫,বছর পর ঋণ মুক্ত হলেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুর

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মাদক, বাড়ছে অপরাধ ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ

পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও দেশীয় মদসহ নানা ধরনের মাদক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই চলছে মাদকসেবন। মরণনেশায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও। ফলে এলাকায় বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ নানা অপরাধ। এতে আতঙ্ক ও ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পুলিশের চোখের সামনেই মাদক বিক্রি হলেও দেখা যায় না কার্যকর কোনো অভিযান।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। পুলিশ জানে, সবাই জানে—কিন্তু কেউ কিছু করে না। অভিযোগ করলেই উল্টো ভয়-ভীতি দেখানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় অন্তত ১৫–২০ জন প্রভাবশালী বড় মাদক ব্যবসায়ী এবং অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা সক্রিয়। প্রভাবশালী মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে তাঁরা গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদক নেটওয়ার্ক। তাঁদের মাধ্যমে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে নিয়মিত মাদক বিক্রি হয়।
প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে—ভাঙ্গুড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, বড়াল ব্রিজ মাছবাজার, চৌবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া, ভদ্রপাড়া, কালীবাড়ি বাজার, পালপাড়া, আদর্শ গ্রাম, হালুয়াঘাট ব্রিজ, সারুটিয়া রেলগেট, জগাতলা বাজার, বড়াল ব্রিজ রেলস্টেশন, চড় ভাঙ্গুড়া পূর্বপাড়া, শাহনগর, কৈডাঙ্গা রেলব্রিজ, নুরনগর, অষ্টমনিষা ঘোষপাড়া, দিলপাশার, খানমরিচসহ আরও অনেক জায়গা।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভাঙ্গুড়ার যুবসমাজ পুরোপুরি মাদকের দখলে চলে যাবে।
মামলা আছে, তবু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বড় ব্যবসায়ীরা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায় জড়িত অনেকেই পুলিশের তালিকাভুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও অধিকাংশই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আগের কারবারে ফিরেছেন। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে, মাদকসেবীরা নেশার টাকা জোগাতে জড়িয়ে পড়ছেন চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। এতে সামাজিক অস্থিরতা প্রতিদিনই বাড়ছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব লিখন সরকার বলেন, ‘এখন ভাঙ্গুড়ায় মোড়ে মোড়ে যেমন মুদির দোকানে নিত্যপণ্য মেলে, তার চেয়েও সহজে মাদক পাওয়া যায়। প্রশাসনের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণেই মাদকের এমন বিস্তার।’
পৌর বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙ্গুড়ায় সচেতন মহল ঐক্যবদ্ধভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণে না এলে প্রশাসন এককভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।’
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রভাষক জাফর ইকবাল হিরোক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গুড়ার আনাচে কানাচে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। যুবক, কিশোর, ছাত্র—সবাই এতে জড়াচ্ছে। প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায় আমি মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু এখনো পুলিশ প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি। প্রশাসনের অবহেলাই মাদকের বিস্তারে দায়ী।’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। মাদক নির্মূলে পুলিশ সর্বদা তৎপর। নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। এ মাসেও একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরজুমা আকতার বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। নিয়মিত অভিযান চলছে এবং আমরা সম্পূর্ণভাবে বদ্ধপরিকর। বড় হোক বা ছোট, যেই মাদক ব্যবসায়ী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি পুলিশের কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে, প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



লাইক করুন