মোঃ নাঈম উদ্দীন স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে নির্বিচারে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
আজ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ জীবননগর উপজেলা শাখার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এক বিশাল মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে জীবননগরের বিভিন্ন জলাশয় ও নদ-নদীতে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু শিকারির কবলে পড়ে এই অতিথিরা প্রাণ হারাচ্ছে।
এই নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।
তাদের দাবি- পাখি শিকার কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
সভায় প্রধান বক্তারা অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রভাষক এইচএম শামসুজ্জামান বলেন, “পাখি আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। তারা কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের রক্ষা করে। অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম বলেন, “শীতকালীন পরিযায়ী পাখিরা আমাদের দেশে মেহমান হিসেবে আসে। অথচ এক শ্রেণির অসাধু মানুষ বিষটোপ বা ফাঁদ পেতে এদের নিধন করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ বিষয়ে আরও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম তার বক্তব্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন এবং ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের শিকারি পাকড়াও করতে বন বিভাগের তৎপরতা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ জীবননগর উপজেলা শাখার সভাপতি শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন-
আলোকচিত্রী টুটুল নেছার
সাংবাদিক এমআই মুকুল
স্বেচ্ছাসেবক সামিউল ইসলাম অভি ও মামুন নীরব
এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ এই আয়োজনে অংশ নেন।
তারা জলাভূমি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কর্মসূচি থেকে বক্তারা তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন:
আইনি প্রয়োগ: বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
জনসচেতনতা: গ্রামগঞ্জে ও জলাশয়ের নিকটবর্তী এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা।
অভয়াশ্রম ঘোষণা: জীবননগরের যেসব এলাকায় পাখিদের সমাগম বেশি, সেগুলোকে অস্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা।
সভা শেষে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং পরিবেশ রক্ষায় শপথ গ্রহণ করেন।