মোঃ নাঈম উদ্দীন স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা। জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর ‘চুয়াডাঙ্গাবাসী ও ছাত্রজনতা’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, জুমার নামাজের পর থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-জনতা চুয়াডাঙ্গা চৌরাস্তা মোড়ে সমবেত হতে থাকেন। মুহূর্তেই এলাকাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে ছিল তীব্র ক্ষোভ। তারা ‘তুমি কে আমি কে হাদি হাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’ এবং ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’-এর মতো স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা শরীফ ওসমান হাদিকে একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে অভিহিত করেন। তারা অভিযোগ করেন, এটি কেবল সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং একটি সুগভীর রাজনৈতিক নীলনকশার অংশ।
বক্তাদের মূল বক্তব্যগুলো ছিল নিম্নরূপ:
সুষ্ঠু তদন্তের দাবি: হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের খুঁজে বের করতে অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।
আধিপত্যবাদের প্রতিবাদ: বক্তারা বলেন, “ভারতীয় আধিপত্য কায়েমের নীলনকশার অংশ হিসেবেই শরীফ ওসমান হাদীকে টার্গেট করা হয়েছে। খুনিরা যেখানেই থাকুক, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
আন্দোলনের ঘোষণা: দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে চুয়াডাঙ্গা থেকে শুরু করে সারাদেশে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
প্রতিবাদ সভায় চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন:
হাসানুজ্জামান সজিব, জেলা সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
তুষার ইমরান সরকার, জেলা সেক্রেটারি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সজিবুল ইসলাম, মুখ্য সংগঠক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চুয়াডাঙ্গা।
ওয়াসির আল মাস্তুর, চুয়াডাঙ্গার সন্তান ও ডাকসু হল সংসদের পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক।
সাগর আহাম্মেদ, জেলা সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির।
এছাড়া ফাহিম উদ্দিন মভিন, মাহফুজ হোসেন এবং স্বপনসহ স্থানীয় ছাত্রনেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিলটি পুনরায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অতিক্রম করে সমাবেশস্থলে এসে শেষ হয়। কর্মসূচির শেষে নিহত শরীফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
মোনাজাতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং শহীদদের রক্ত বৃথা না যাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়।
বক্তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, হাদির রক্তে ভেজা এই আন্দোলন ততক্ষণ থামবে না, যতক্ষণ না খুনিরা কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে।