জাহিদ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক প্রতিষ্টান শিল্প মন্তানালয়ের আওতাধীন চিনি ও খাদ্য শিল্প দ্বারা পরিচালিত চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনাস্হ কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা অতীতের বছরের তুলনায় এ বছরে সর্বচ্চ লাভের মূখ দেখলো প্রতিষ্ঠানটি।
চিনি ও খাদ্য শিল্পের ৮৪ বছরের জরাজীর্ণ পুরাতন প্রতিষ্ঠান কেরু এ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ)লিঃ। এটি দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী সরকারি অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর দেশি ও বিলেতি মদের চাহিদা বেড়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ।
গত২০২৩-২৪ ইং বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।এতে বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত দেশি ও বিলেতি মদের চাহিদা।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শুধু ডিস্টিলারি বিভিন্ন ইউনিট থেকে মদ বিক্রি করে কেরুর আয় হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।কেরু,র নিজস্ব লাভ হয়েছে ১১৫ কোটি টাকারও বেশি, যা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৫টি চিনিকলের মধ্যে অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের জন্যও লাভজনক এবং নিয়মিত করও দেয়। কেরুর প্রাণ মূলত আখ আখের রসের চিটাগুড়(মোলাসেস) থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি, যা চিনি উৎপাদনের উপজাত। চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়।
এর মধ্যে রয়েছে চিটাগুড়(মোলাসেস) ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো চিটাগুড়(মোলাসেস) । চিটাগুড়(মোলাসেস) সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল। মদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বাড়ায় প্রতিষ্টানটি। বিক্রিও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে কেরুর মুনাফা। কেরুতে বর্তমানে ৯টি ভিন্ন ব্র্যান্ডের আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার মদ, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করা হয়। ৯টি মদের ব্র্যান্ড এগুলো হচ্ছে- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।মদের পাশাপাশি ভিনেগার(মলটেড,সাদা), হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি এবং চিটাগুড় উৎপাদন করে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্টানটি।
প্রতিষ্ঠানটির ২০০টি বিতরণকারী এজেন্ট এবং সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস রয়েছে।
অনুসন্ধানে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন এবং জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলি তুলে ধরার জন্য কেরু এন্ড কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিভিন্ন আখ চাষীর সাথে আলোচিত কণ্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি কথা বলে জানা যায়, কেরু এন্ড কোম্পানিতে যোগদানের পর খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ । নানা কর্মপরিকল্পনা করছেন, কেরু বিটিস আমলের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। এর ৮৪ বছরের ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানে নানা তাৎপর্যমূলক কাজ হয়েছে। এদেশের মানুষের মনোজগতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কেরু এন্ড কোম্পানি চেষ্টা করেছে এককভাবে নয়, কেরু গুণগতমান উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন।
ইতোমধ্যেই কাঁচামাল আখ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাঠ দিবস অব্যাহত রয়েছে।
সরজমিন প্রদর্শন কালে জানাগেছে মো রাব্বিক হাসান এফসিএমএ উন্নয়নের কারনে সামনের বছরে আরও আধুনিক হতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি! এই বৃহত্তর শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে বিগত দিনে নানা অনিয়ম দুর্নীতি দ্বায়িত্ব পালনে অবহেলা ডিস্টিলারি থেকে মদ চুরি সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট বানিজ্যর অভিযোগ বেশ আগে থেকেই, গত বছরের ৫ ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানিটির এমডি পদে দ্বায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ , মাত্র ১ বছর দ্বায়িত্ব পালন করেই বদলে দিয়েছেন কেরু এন্ড কোম্পানীর সকল প্রকার, সিন্ডিকেট টেন্ডার বানিজ্য সহ নানান অনিয়ম, এই অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার ফলে কেরু এন্ড কোম্পানীটি আগের তুলনায় অনেকটা লাভজনক অবস্থানে পৌঁছিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ডিস্টিলারি বিভাগের উন্নয়ন, কেরুর শ্রমিক সংকট সমাধান, রাসায়নিক ও জৈব কারখানার উন্নয়ন সহ বেশ কিছু দৃশ্যমান কাজ করে প্রশংসায় প্রশংশিত মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ
কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের সাথে “দেখা করার জন্য সাক্ষাৎ করতে অফিসে গেলে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আরও এক কর্মকর্তা কে জিজ্ঞাসা করছে এখনো অফিসে কেনো বাসায় যাবি কখন, এমনটা বলতে শোনা যায়।
উত্তরে আর এক কর্মকর্তা বলেন,আগের দিন বাঘে খেয়েছে আগের স্যাররা তো দুপুর ১ টা বাজলেই অফিস থেকে চলে যেত,, বর্তমান এমডি মাঝে মাঝে স্যার ৪ টা পর্যন্ত অফিস করে। স্যার না গেলে তো আমরা যেতে পারি না।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান সম্পর্কে জানতে ব্যবস্হাপক(পরিঃ প্রকৌ)মোঃ আবু সাইদএর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান এমডি স্যার আমার দেখা একজন চৌকস, সৎ, দায়িত্বশীল ও মানবিক, স্যারের মূল পরিকল্পনা ৮৪ বছর বয়সী এই “চিনিকলটি”কে আধুনিকীকরণ করা এবং এর বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকেরা যাতে আখ চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেয় তার জন্য নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্যার, চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) ও জৈব সার- এই ছয়টি ইউনিট স্যার উন্নয়ন মূলক দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেন।এই বিষয় আরো জানতে মহাব্যবস্হাপক(কৃষি)আশরাফুল আলম ভুঁইয়া বলেন, দেশে যখন দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ। এই বিষয়টি মাথায় রেখে বর্তমানে এমডি মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ স্যার নিজে চাষীদের কাছে গিয়ে স্বল্প জমিতে অধিক আখ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে আখ চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চাষিরা ইচ্ছা করলে যে কোন ধরণের জমিতে আখ চাষ করতে পারবে। বর্তমানে স্যার এর চিন্তাভাবনা কিভাবে কেরু এন্ড কোম্পানি লাভবান করা যায়।কৃষক কোন পদ্ধতিতে আখ চাষ করলে লাভবান হবে কৃষিকে শিল্পে রূপান্তরিত করতে পারলে কমে যাবে দেশের বেকার সমস্যা। তাই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা খুবই জরুরী। বৃত্তাকার গর্তে আখ রোপণ করা হচ্ছে এখন। আখের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এরই মধ্যে এমডি স্যার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে করে চাষিরা আখ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর নিকট আমার উদাত্ত্ব আহ্বান আপনাদের এ প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে অন্তত কম বেশি আখ চাষ করেন। কারণ আখের মূল্য নির্ধারিত এবং বিক্রির গ্যারান্টি আছে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
সামনের বছরেই আরও আধুনিক হচ্ছে প্রতিষ্টানটি!এই বিষয় সম্পর্কে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান এফসিএমএ আলোচিত কণ্ঠ কে জানান, মাননীয় শিল্প উপদেষ্টা মহোদয়, শিল্প সচিব মহোদয় ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় মোতাবেক, দেশের ঐতিহ্যবাহী চিনি শিল্প কেরু অ্যান্ড কোম্পানি(বাংলাদেশ) লিঃ অন্যান্য পণ্যে উৎপাদন সহ এই চিনি শিল্পকে এগিয়ে নিতে এবং সর্বোচ্চ লাভজনক হিসাবে পরিনত করতে আমরা নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছি। যা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। যার মধ্যে আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, ভালো মানের বীজ নির্ধারণসহ কৃষি কাজে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার চিনিকলের লোকসানের অংক কমে আসবে এবং আগামীতে তা লাভজনক হিসাবে রুপান্তরিত হবে বলে আমি আশাবাদী। তবে চিনিশিল্পের প্রধান কাঁচামাল আখ। চিনিশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আখ চাষের কোন বিকল্প নেই।
আমরা বাইরের দেশ থেকে চিনি আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই, সংকট কাটিয়ে উঠতে চাই এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে চাই। চিনি উৎপাদন বাড়াতে কাঁচামাল পণ্য হিসেবে আখ প্রয়োজন। আখের উৎপাদন বাড়াতেও সরকার উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ সরবরাহ করছে, ঋণ দিচ্ছে এবং গত দুই বছর থেকে আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। চাষীদের উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।
মোঃ রাব্বিক হাসান এফসিএমএ আরও বলেন, কঠোর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সাফল্য অর্জন করা কঠিন। একটি সমাজ বা জাতির উন্নতির জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রমী নাগরিক। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই উন্নতির শিখরে উঠেছে। মানুষ যদি তার লক্ষ্যে অটুট থাকে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে, তবে একদিন সে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছতে পারে বলে আমি মনে করি, কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হাত ধরে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের সর্বোচ্চ লাভের দিকে অগ্রসর হবে ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার আমজনতা আমার পাশে থাকলে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিঃ কে আমি এশিয়া মহাদেশের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠানে রুপ দেবো