বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গাজামুখী নৌবহর থেকে আটক ১৩টি নৌকা; গ্রেপ্তার দুই শতাধিক জুলাই সনদে একদলীয় শাসনের বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উল্লেখ সিরাজগঞ্জ-৩ রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শন ও আর্থিক সহযোগিতা করলেন শিল্পপতি রুহী আফজাল  শাপলা প্রতীক পেলে মামলা করবেন না: মান্না ফ্লোটিলায় হামলার প্রতিবাদে ইউরোপ জুড়ে বিক্ষোভ সব ব্যাংক মিলেই গ্রাহকের ঋণ সীমা বেঁধে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ১৫ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের দুই জাহাজ ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েল পটুয়াখালীর গলাচিপায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নিরবিচ্ছিন্ন শারদ

বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা সর্বনিম্নে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নতুন বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিল্প ও ব্যবসা খাতে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ না আসায় অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাত থেকে ঋণের চাহিদা ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে কোনো নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৪ কোটিতে। অর্থাৎ এক মাসে ঋণ স্থিতি কমেছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত তিন অর্থবছর ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্য কমিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ করা হলেও জুলাইয়ে সেই ধারা অর্জিত হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) জানিয়েছে, ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহ, উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকগুলোর সতর্ক ঋণনীতিই এ পরিস্থিতির কারণ। একই সময়ে উন্নয়ন ব্যয় বাস্তবায়নেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায়ও কম। রাজস্ব আয়েও লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি রয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, নতুন প্রকল্প বা সম্প্রসারণ নয়, বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার এবং বাড়তি কর-ভ্যাট এ খাতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকাররা জানান, আমদানির ধীরগতি এবং সরকারি বিল-বন্ডে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় নতুন ঋণ বিতরণ সীমিত হয়ে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, শুধু বেসরকারি নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ঋণ স্থিতিও কমেছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা, যা ছয় মাসে কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪ হাজার ২২৬ কোটিতে।

পুঁজিবাজারেও একই ধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০ হলেও দেড় বছর ধরে কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসেনি। গত এক বছরে মাত্র ১২টি কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইপিওর সঠিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির অভাব, কর বৈষম্য ও আস্থাহীনতা উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে পুঁজি প্রবাহ না বাড়লে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, ফলে অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও ব্যাহত হবে।

 



লাইক করুন