বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন

টেকনাফে পোস্টিং–রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ! শেষমেষ ভুয়া নিয়োগপত্রের নাটক ফাঁস

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সিপাহি পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন তৈরি করে সিরাজগঞ্জের এক যুবকের কাছ থেকে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী উল্লাপাড়ার বেতকান্দি গ্রামের মো. আব্দুল মালেক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, প্রতারণার মূল হোতা দুজন—মো. ফিরোজ উদ্দিন ও রাশিদুল ইসলাম। তারা সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। ফিরোজ ঢাকার মিরপুর সামরিক বাহিনী কমান্ড স্টাফ কলেজে অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত এবং রাশিদুল ঢাকার মধ্য বাড্ডায় প্রবাসী এজেন্সি ব্যবসায়ী। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের চরটেংরাইল গ্রামে।

প্রতারক চক্র প্রথমে আব্দুল মালেকের পরিবারকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জানায় যে ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সিপাহি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। একাধিক পর্যায়ে নগদ অর্থ ও ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তারা টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন সরবরাহ করে জানানো হয় যে মালেকের পোস্টিং হবে কক্সবাজারের টেকনাফে এবং প্রশিক্ষণ নিতে হবে রাজশাহীতে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রশিক্ষণে যোগ দিতে গেলে তিনি জানতে পারেন নিয়োগপত্র ও ভেরিফিকেশন দুটোই ভুয়া।

আব্দুল মালেক অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রতারণার মাধ্যমে ফিরোজ ও রাশিদুল তার কাছ থেকে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৭টি স্ট্যাম্প ও ৭টি চেক নিয়েছেন। টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি মিরপুর সেনানিবাসের কমান্ড স্টাফ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন। ফিরোজের ব্যক্তিগত নম্বর ১১৯১৪।

ভুক্তভোগী আব্দুল মালেক বলেন, আমার মতো আর কোনো যুবক যেন ভুয়া নিয়োগপত্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত না হয়। আমি প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে ফিরোজের বড় মামা ও কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান জানান, “আমি সামাজিক সমঝোতার মাধ্যমে মালেককে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১০টি চেক প্রদান করেছিলাম। দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার দায়িত্বও নিয়েছিলাম। তবে ফিরোজের বাবা-মা জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধে রাজি হচ্ছেন না।

অন্যদিকে স্থানীয় মুরুব্বী মাওলানা হযরত আলী জানান, গ্রাম্য সালিশে ফিরোজ স্বীকার করেছেন যে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মালেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। সময় চেয়ে নিলেও এখনো টাকা ফেরত দেননি। মালেককে দেওয়া ১০টি চেকও ব্যাংক থেকে ভুয়া সিগনেচারের কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এমনকি ব্যাংকের রেকর্ডে ফিরোজের বিরুদ্ধে পূর্বেও প্রতারণার অভিযোগ থাকার তথ্য মিলেছে।

এ ঘটনায় প্রতারকদের নামে সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মামলায় একাধিকবার হাজির হইবার নোটিশ পাঠালেও তারা আদালতে হাজিরা না দিয়ে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে প্রবাসী এজেন্সীর কর্মরত রাশিদুল ইসলাম বলেন, শ্যালকের কথা মতে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে মালেকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা গ্রহন করি। ওই টাকা পরে ফিরোজকে দিয়ে দেই। এরপর ফিরোজ দফায় দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে মালেকের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করেছে। তবে টাকা পরিশোধের চেষ্টা চালিয়ে ফিরোজ ও তার পরিবার।

এদিকে ফিরোজের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল বলেন, অভিযোগপত্র পেয়ে উভয়পক্ষকে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠালেও ফিরোজ ও রাশিদুল হাজির হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। ফিরোজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দপ্তরে চাকুরি করায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।



লাইক করুন