নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়েও পুরোনো দলটি সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। প্রায় ৫৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। তখন তাদের প্রতীক ছিল লাঙ্গল। যদিও দলটি প্রতিষ্ঠার সময় নিবন্ধনের কোনো নিয়ম ছিল না। তাই এখন নিবন্ধন সঙ্গে সঙ্গে তাদের আগের সেই প্রতীক ফিরে পেতে চান তারা।,
জানা গেছে, পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই গঠিত হয় ‘জাতীয় লীগ’। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ঢাকা-৩ আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন আতাউর। তবে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় লীগের হয়ে ঢাকা-১৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তার প্রতীক ছিল লাঙ্গল।
আতাউর পরে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাকশালে যোগ দিয়ে এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর বাকশাল বিলুপ্তি হলে তিনি জাতীয় লীগ পুনরায় সংগঠিত করেন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-২১ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে জয়ী হন। একই নির্বাচনে প্রফেসর মফিজুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।,
১৯৮৩-৮৪ সালে সাত দলীয় জোটের অন্যতম সদস্য হিসেবে এরশাদ সরকারের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন আতাউর। পরে মত পরিবর্তন করে ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ৩০ মার্চ এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এতে বিলুপ্ত হয়ে যায় জাতীয় লীগ।
বাংলাদেশ জাতীয় লীগ জানায়, দীর্ঘদিন পথচলার পর দলটি ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে। এটা খুশির খবর। জাতীয় লীগ থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। তিনি প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। এ ছাড়া কুমিল্লা থেকে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন প্রফেসর মফিজুল ইসলাম। তিনিও কিন্তু লাঙ্গল প্রতীকে এমপি হন। সুতরাং লাঙ্গল প্রতীকের হকদার বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।,
দলটির নেতারা বলছেন, ১৯৬৯ সালে জাতীয় লীগ যখন যাত্রা শুরু করে তখন দলীয় প্রতীক ছিল লাঙ্গল। পরে এ প্রতীক এরশাদের জাতীয় পার্টি জোর করে নিয়ে গেছে। এখন পুনরায় এটি ফিরে পেতে চান তারা।
জাতীয় লীগের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পথচলার পর আমাদের দলটি ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুশির খবর। আমাদের দল থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। তিনি প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কুমিল্লা থেকে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন প্রফেসর মফিজুল ইসলাম। তিনিও কিন্তু লাঙ্গল প্রতীকে এমপি হন। সুতরাং লাঙ্গল প্রতীকের হকদার বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। দলটির পুরোনো ঐতিহাসিক প্রতীক লাঙ্গল ফিরে পেতে আমরা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করবো।’
তিনি বলেন, ‘লাঙ্গল হারানোর পর আমাদের প্রতীক ছিল আনারস। সেই প্রতীকও অন্য দলকে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা ‘কলার ছড়ি’ নাম দিয়ে রেখেছি। একটি প্রতীকের নাম দিতে হয় তাই দিয়েছি, তবে আমরা লাঙ্গল প্রতীক চাইবো ইসির কাছে।’
নিবন্ধন পাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় লীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর বারবার ইসিতে আবেদন করেও নিবন্ধন পাইনি। তবে একই তথ্য জমা দিয়ে ২০২৫ সালে নিবন্ধন পাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নিবন্ধন প্রথা চালু হয়।,