শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আলমডাঙ্গায় ‘প্রকৃতির রঙ’ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ গাজীপুরে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৭ ইউনিট পিতার শেষ বিদায়ে দীর্ঘ ২৩ বছর পর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে পিতার জানাজায়  আলমডাঙ্গায় চায়নাবার ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর খুনিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ  আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহ সভাপতি আইয়ুব আলীর ইন্তেকাল দর্শনায় এসএসসি–৮৭ বন্ধু মহলের পিকনিক আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত শরীফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতার উত্তাল বিক্ষোভ: খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি নির্বাচন বানচাল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই হামলা, মানববন্ধনে প্রথম আলোর কর্মীরা ভারতীয় গুপ্তচর স‌ন্দে‌হে যুবককে আটক ক‌রে পু‌লি‌শে সোপর্দ

বিমানযোগে যেভাবে মরদেহ আনা–নেওয়া হয়

বি.এম. সাদ্দাম হোসেন ; স্টাফ রিপোর্টারঃ নিয়ম, ধাপ, কাগজপত্র ও খরচের পূর্ণাঙ্গ গাইড

সাধারণত মৃত্যুর পর অনেক সময় মরদেহকে দ্রুত এক শহর থেকে অন্য শহর কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বিমানই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কার্যকর, নিরাপদ ও সম্মানজনক মাধ্যম। তবে বিমানযোগে মরদেহ পরিবহন কোনো সাধারণ যাত্রা নয়। এর সঙ্গে জড়িত আছে স্বাস্থ্যবিধি, আইনগত অনুমোদন, আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন এবং এয়ারলাইন্সের নির্দিষ্ট নীতিমালা।

এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো—বিমানযোগে মরদেহ পরিবহনের পুরো প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ধাপসমূহ এবং আনুমানিক খরচ।

কেন বিমানে মরদেহ পরিবহন করা হয়?

দূরত্ব বেশি হলে সড়কপথ বা নৌপথে মরদেহ পরিবহন সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সে কারণে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মরদেহ দ্রুত এবং মর্যাদার সঙ্গে পৌঁছে দিতে বিমান পরিবহনই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “Repatriation of Mortal Remains”, অর্থাৎ মরদেহ নিজ দেশ বা নির্ধারিত গন্তব্যে ফেরত পাঠানো।

প্রথম ধাপ: মৃত্যুসনদ ও প্রাথমিক অনুমোদন

বিমানযোগে মরদেহ পাঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হলো মৃত্যুসনদ (Death Certificate)। এটি অবশ্যই হাসপাতাল বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

এর পাশাপাশি প্রয়োজন হয়—

স্থানীয় থানার অনাপত্তিপত্র (Police Clearance / NOC)

স্বাস্থ্য বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন

স্বাভাবিক মৃত্যু না হলে বা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয় না।

এমবাম্বিং: মরদেহ সংরক্ষণের বাধ্যতামূলক ধাপ

বিমানযোগে পরিবহনের আগে প্রায় সব দেশেই এমবাম্বিং (Embalming) বাধ্যতামূলক। এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ রাসায়নিক তরল ব্যবহার করে মরদেহ সংরক্ষণ করা হয়, যাতে—

দুর্গন্ধ না ছড়ায়–

সংক্রমণের ঝুঁকি কমে

দীর্ঘ সময় নিরাপদে পরিবহন সম্ভব হয়

এমবাম্বিং সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা অনুমোদিত সংস্থা থেকে একটি Embalming Certificate প্রদান করা হয়। এই সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স মরদেহ গ্রহণ করে না।

কাফিন ও সিলিং: নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি—

এমবাম্বিংয়ের পর মরদেহ রাখা হয় বিশেষ ধরনের কাফিনে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী—

কাফিন হতে হবে শক্ত ও এয়ারটাইট—

ভেতরে জিঙ্ক বা ধাতব লেয়ার থাকতে হবে

বাইরে কাঠ বা ফাইবারের আবরণ থাকতে হবে

কাফিন সম্পূর্ণভাবে সিল করা থাকতে হবে

এই ধাপ শেষে দেওয়া হয় Coffin Sealing Certificate।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের পূর্ণ তালিকা—

বিমানযোগে মরদেহ পরিবহনের জন্য সাধারণত যেসব নথি প্রয়োজন—

1. মৃত্যুসনদ (Death Certificate)

2. এমবাম্বিং সার্টিফিকেট

3. কাফিন সিলিং সার্টিফিকেট

4. পুলিশের অনাপত্তিপত্র

5. মৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি

6. গ্রহণকারী ব্যক্তির পরিচয়পত্র

7. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেটের অনুমোদন

আন্তর্জাতিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সব নথি সাধারণত ইংরেজিতে হতে হয়।

এয়ারলাইন্সের নিয়ম: যাত্রী নয়, কার্গো হিসেবে পরিবহন—

প্রায় সব এয়ারলাইন্সই মৃতদেহকে যাত্রী হিসেবে নয়, এয়ার কার্গো হিসেবে পরিবহন করে। এয়ারলাইন্সগুলোর সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী—

মরদেহ আলাদা কার্গো হোল্ডে রাখা হয়—

নির্দিষ্ট মাপ ও ওজনের কাফিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক

সব কাগজপত্র আগেই যাচাই করা হয়–+

ফ্লাইট ছাড়ার অন্তত ৩–৪ ঘণ্টা আগে কার্গো টার্মিনালে জমা দিতে হয়

কিছু এয়ারলাইন্স মানবিক কারণে মরদেহ পরিবহনে বিশেষ ছাড় বা সহায়তা দিয়ে থাকে, যা তাদের নিজস্ব নীতির ওপর নির্ভর করে।

বিমানবন্দরে প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়?

মরদেহ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর—

1. কার্গো অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়

2. যাচাই শেষে Air Way Bill তৈরি করা হয়

3. নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়

4. ফ্লাইটের কার্গো হোল্ডে মরদেহ সংরক্ষিত অবস্থায় পরিবহন করা হয়

গন্তব্য বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একইভাবে কাগজপত্র দেখিয়ে মরদেহ গ্রহণ করতে হয়।

খরচ কত হতে পারে?

দেশের ভেতরে (ডোমেস্টিক)

এমবাম্বিং: ৫,০০০ – ১৫,০০০ টাকা

কাফিন: ১০,০০০ – ২৫,০০০ টাকা

এয়ার কার্গো বিল: ১০,০০০ – ৩০,০০০ টাকা

মোট আনুমানিক খরচ: ৩০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে_—

আন্তর্জাতিক পরিবহনে খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। সাধারণত ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এতে যুক্ত হয়

দূতাবাস ফি

কাস্টমস চার্জ

অতিরিক্ত কাগজপত্র ও সার্ভিস চার্জ

শেষ কথা

বিমানযোগে মরদেহ পরিবহন একটি সংবেদনশীল ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। সামান্য ভুল বা কাগজপত্রের ঘাটতির কারণে পুরো যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। তাই আগেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, এয়ারলাইন্স ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব নিয়ম জেনে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

শোকের মুহূর্তে পরিবারের জন্য যেন বাড়তি ভোগান্তি না হয়—সে লক্ষ্যেই এই পুরো প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট নিয়ম ও সর্বোচ্চ সম্মানের সঙ্গে পরিচালিত হয়।



লাইক করুন