শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন

জয়া আহসানের অভিনয় যাত্রা ও জীবনের দর্শন: পরিশ্রম, অতীতের ভালোবাসা ও সামাজিক দায়িত্ব

সোমা রানী কর্মকার,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান অভিনেত্রী জয়া আহসান তাঁর অভিনয় দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন। শুধু অভিনয় নয়, সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকার মাধ্যমে তিনি ভক্ত-অনুরাগীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখেন। সম্প্রতি এক পডকাস্টে জয়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক এবং অভিনয়ের যাত্রা নিয়ে অকপটে কথোপকথন করেছেন, যা তাঁর ভক্তদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।

অভিনয়ে সফলতার পেছনে অধ্যবসায় ও নিজেকে পরীক্ষার গুরুত্ব

জয়া আহসান মনে করেন, ট্যালেন্ট বা মেধা একা সফলতার চাবিকাঠি নয়। তাঁর মতে, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং নিজের প্রতি নিয়ত পরীক্ষা চালিয়ে চলা। এই মনোভাবেই তিনি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। পডকাস্ট ‘বিহাইন্ড দ্য ফেইম উইথ আরআরকে’ এর দ্বাদশ পর্বে, সঞ্চালক রুম্মান রশীদ খানের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জানান, অভিনয়ের শুরুতে তিনি ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল বুঝতে পারতেন না। তবে গুণী নির্মাতাদের নির্দেশনায় ধীরে ধীরে তিনি এই শিল্পের অক্ষর শিখেছেন। এই দীর্ঘ পথচলায় পরিশ্রম ও ধৈর্যই ছিল তাঁর প্রধান সঙ্গী।

এই কথাগুলো আমাদের জন্যও শিক্ষণীয় যে, যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হতে হলে শুধুমাত্র মেধা নয়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও নিজের উন্নতির জন্য নিরন্তর চেষ্টা অপরিহার্য।

অতীতের প্রতি আবেগ: জয়ার ঘর সংসারের অনন্য সংগ্রহ

জয়া আহসানের ব্যক্তিগত জীবনের আরেকটি বিশেষ দিক হলো তাঁর অতীত ও পুরোনো জিনিসের প্রতি গভীর ভালবাসা। তাঁর বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো আলমারি এবং সেই খাট, যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই অতীতের নিদর্শনগুলো তাঁর জীবনের অংশ, যা তিনি খুবই সংরক্ষণ করেন।

জয়া বলেন, “পুরোনো শুধু অতীত নয়, আমার কাছে এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ। অতীতকে ভালোবাসা মানে নিজের শিকড়কে সম্মান করা।” এভাবে অতীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নিজ ইতিহাসকে জানাই ভবিষ্যতের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলে।

সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য: বাস্তবতার সম্মুখীন

আজকের ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। জয়া আহসান সামাজিক মাধ্যমে বুলিং বা নেতিবাচক মন্তব্য সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কমেন্টবক্স খুব বেশি পড়ি না, কিন্তু যখন পড়ি দেখি অনেকেই অশোভন মন্তব্য করেন। যারা এই ধরনের বাজে কথা ছড়ায়, তাদের জন্য আমি দুঃখিত।”

জয়া আরও বলেন, “তারা হয়তো একদিন পৃথিবী ছাড়বেন, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের পাপ থেকে তারা মুক্তি পাবে না। আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি না, কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখতে পারি।”

এই বক্তব্য আমাদের সচেতন করে তোলে যে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সম্মান ও সদয় মনোভাব অপরিহার্য, কারণ কথার প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে।

জয়া আহসানের জীবন ও দর্শনের গুরুত্ব

জয়া আহসানের কথাগুলো আমাদেরকে শেখায় যে, জীবনে সফলতা অর্জন শুধু মেধার ওপর নির্ভর করে না, বরং ধৈর্য, পরিশ্রম এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসই মূল চাবিকাঠি। অতীতের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে চলাও তাঁর ব্যক্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

যারা অভিনয় বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের পথ তৈরি করতে চান, তাদের জন্য জয়ার জীবন ও বক্তব্য একটি দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা ও নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকা আমাদের সবার জন্য জরুরি।



লাইক করুন